ছফওয়ান আল মুসাইব

সময় এবং অগ্রাধিকার

সময় এবং অগ্রাধিকার

সময় আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। অথচ ব্যস্ততার অজুহাতে আমরা প্রায়ই এই সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হই। এর ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক—বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি পরিবারের সাথেও—দূরত্ব তৈরি হয়। আমরা বলি, “সময় নেই,” কিন্তু সত্যিই কি সময়ের অভাব, নাকি অগ্রাধিকারের অভাব?

আমরা যখন কাজ, সামাজিক যোগাযোগ, বা অন্যান্য দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাই, তখন কাছের মানুষদের জন্য সময় দেওয়া যেন এক ধরনের বিলাসিতায় পরিণত হয়। আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করার পরিবর্তে, আমরা অনেক সময় নিজেদের ব্যস্ততায় এতটাই ডুবে যাই যে সেসব সম্পর্ক ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া হয় না, প্রিয়জনের খোঁজ নেওয়া হয় না, আর সময়ের সাথে সেই আত্মিক বন্ধনগুলো ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

“সময় নেই” বলতে আসলে কী বোঝায়?

“সময় নেই”—এই কথাটি আমরা প্রায়ই শুনি। কিন্তু এটি কি সত্যিই সময়ের অভাব, নাকি অন্যকিছুর আড়ালে লুকিয়ে থাকা অগ্রাধিকারের অভাব? বাস্তবতা হলো, যাকে আমরা জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, তার জন্য সব ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করা সম্ভব। তাই যখন কেউ বলে, “সময় পাচ্ছি না,” তখন তা আসলে ইঙ্গিত দেয় যে, সেই সম্পর্ক বা মানুষটি তার জীবনে হয়তো ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

ইচ্ছে থাকলে কি সময় হয় না?

ইচ্ছে থাকলে স্রোতের বিপরীতেও সাঁতার কাটা যায়। এটি কোনো কবিতার লাইন নয়, বাস্তব সত্য। কেউ যদি সত্যিই কোনো সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়, তবে শত ব্যস্ততার মাঝেও সে সময় বের করবে। এক মিনিটের ফোন, একটি মেসেজ, অথবা একটি খুদে বার্তা—এই ছোট ছোট জিনিসগুলো সম্পর্ককে জীবন্ত এবং উষ্ণ রাখে। কিন্তু যখন আগ্রহ বা ইচ্ছার অভাব দেখা দেয়, তখন “সময় নেই” শব্দটি একটি অজুহাতে পরিণত হয়।

সম্পর্ক টিকে থাকে যত্নে!

সম্পর্ক কোনো যান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়; এটি হৃদয়ের আবেগ, যত্ন, আর মনোযোগের নরম পরশে বাঁচে ও বেড়ে ওঠে। প্রিয়জনের জন্য দেওয়া প্রতিটি মুহূর্ত ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার এক নিঃশব্দ ভাষা। আর যখন সেই সময় দেওয়ার অভাব ঘটে, তা মূলত সম্পর্কের প্রতি দায়িত্ববোধের ঘাটতিই প্রকাশ করে। 

যে মানুষটি আমাদের জীবনে গুরুত্ব দেয়, সে আমাদের জন্য সময় বের করবে। আর যে দেয় না, তার কাছে আমরা অগ্রাধিকারে নেই। আর এটি মেনে নেওয়া কঠিন হলেও, এটি জীবনের বাস্তবতা। 

শেষ কথা___

সময় হলো সম্পর্কের সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি। এটি শুধু শারীরিক উপস্থিতির বিষয় নয়; বরং মানসিকভাবে পাশে থাকার গভীর প্রতিশ্রুতি। জীবনের ব্যস্ততায় আমরা সকলেই জড়িয়ে থাকি, তবে সেই ব্যস্ততার মাঝেও প্রিয়জনের জন্য সময় বের করাই হলো সত্যিকারের ভালোবাসার পরিচয়। সম্পর্ক বাঁচে বিশ্বাস, যত্ন আর মনোযোগে, আর এগুলো সময়ের বিনিয়োগেই সম্ভব। তাই প্রিয়জনের প্রতি দায়িত্বশীল হোন, সময় দিন, কারণ হারিয়ে গেলে সম্পর্ক আর ফিরে আসে না—তাতে শুধু থাকে এক গভীর শূন্যতার গল্প।

আমার সম্পর্কে

আমি ছফওয়ান আল মুসাইব, একজন 3D আর্টিস্ট, ভিডিও এডিটর। 3D আর্টের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই আমি আমার ক্যারিয়ার শুরু করি, এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের দক্ষতা গড়ে তুলেছি। পেশাগত জীবনে সাফল্যের পাশাপাশি আমি গল্প লেখা এবং ভ্রমণে দারুণ আগ্রহী। শখের বসে মাঝে মাঝে হাতে কলম তুলে নিই এবং আমার মনের ভাবনা ও অনুভূতিগুলোকে শব্দে রূপ দিই। আমার লেখা গল্পগুলো বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে, যা অনেক পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

জনপ্রিয় পোস্ট

সাম্প্রতিক পোস্ট