ছফওয়ান আল মুসাইব

নুসাইবা

নুসাইবা

সারা বিশ্বে যেসব তত্ত্ব পশ্চিম ফেরি করে ফিরেছে, তার মাঝে অন্যতম হলো_নারীবাদ। এই নারীবাদের কবলে পড়ে সংশয় ভুগছে অনেক মুসলিম নারী। ইসলাম নিয়ে তাদের মনে আসছে অসংখ্য প্রশ্ন। এ রকমই কিছু প্রশ্ন গল্পকারে উত্তর নিয়ে আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ রচিত ‘নুসাইবা: এক সত্যান্বেষী নারী’ বইটি। যা সত্য ও মিথ্যার চিরন্তন লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে ইসলামী বিধানগুলোর যৌক্তিকতা তুলে ধরার এক সাহসী প্রচেষ্টা। আধুনিক সময়ে পশ্চিমা এবং ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণায় নারীবাদ যখন এক শক্তিশালী ‘মিথ্যার ঝঞ্ঝাট’ হিসেবে আবির্ভূত, তখন ইসলাম নারীর স্বভাবজাত প্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে ভারসাম্যপূর্ণ রূপরেখা দান করেছে, তাই এই গল্পের মূল উপজীব্য । বইটিতে ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা, অধিকার এবং বিভিন্ন বিতর্কিত বিধানের ভুল ব্যাখ্যার নিরসন ঘটানো হয়েছে একটি আলোচনামূলক গল্পের মাধ্যমে।

মূল চরিত্র  ও গল্পের কাঠামোঃ

বইটির প্রধান চরিত্র নুসাইবা, একজন যুক্তিবাদী, আকর্ষণীয় ভাষাশৈলী ও গুছানো কথাবার্তার অধিকারী আধুনিক তরুণী। গল্পের শুরুতে তাকে একজন নারীবাদী লেখিকা, সেকুলারিজমের সাথে সম্পৃক্ত মুক্তমনা, এবং পাশ্চাত্যধর্মে ধর্মান্ধ হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। তার বাবাও একজন সাহিত্যমনা, যিনি মুক্তচিন্তার নামে নাস্তিকতাকে সমর্থন করেন এবং নুসাইবার এই মনোভাব নিয়ে গর্ববোধ করেন।

গল্পের কাঠামোটি প্রধানত প্রশ্নোত্তর ও বিতর্কমূলক কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে তৈরি। নুসাইবার সত্যান্বেষী যাত্রা শুরু হয় তার বান্ধবী ফাইজা ও সহপাঠী রেশমি এবং নাস্তিক-নারীবাদী ফারজানার সাথে বিভিন্ন তর্কের মধ্য দিয়ে। নুসাইবা ইসলামের বিভিন্ন বিধান (যেমন: প্রহার, উত্তরাধিকার, বোরকা, মহর, নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা, বিধবা বিবাহ, পিরিয়ড ইত্যাদি) নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলে, ফাইজা কুরআন, হাদিস, ও আরবি ভাষার ব্যাকরণের নীতিমালার সাহায্যে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়।

এই কথোপকথনগুলো নুসাইবার মনে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের এক তীব্র ঝলক সৃষ্টি করে, যা তাকে কুরআনুল কারিমের তাফসির অধ্যয়নে উৎসাহিত করে। এরপরে নুসাইবা তার আগের জীবন ও ভুল বিশ্বাস থেকে ফিরে আসে এবং একনিষ্ঠভাবে ইসলামের পথে ফিরে আসে। নুসাইবার এই পরিবর্তন তার বাবার ক্ষোভ এবং মায়ের স্বস্তির কারণ হয়। আর এই ক্ষোভ থেকে তার বাবা তাকে তার চাচাতো ভাই এর সাথে বিবাহের বন্দোবস্ত করতে চায়। তবে তার চাচাতো ভাই বখাটে হওয়ার কারণে নুসাইবার মা, নুসাইবার বাবাকে বুঝিয়ে তার মামাতো ভাই এর সাথে বিবাহের ব্যবস্থা করে। তবে বইটির শেষ অংশে গিয়ে তার বাবাও ইসলামের ছায়াতলে ফিরে আসে। 

বইয়ের মূল উদ্দেশ্য ও আলোচনার বিষয়বস্তুঃ

বইটির মূল বার্তা স্পষ্ট। আর তা হল, নারী-পুরুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি এবং পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল একমাত্র জীবনব্যবস্থা হলো ইসলাম । তথাকথিত ‘নারী স্বাধীনতার’ নামে পরাধীনতা, অবক্ষয় ও নিজের ওপর অবিচার ডেকে আনার যে পরিণতি, তা থেকে বাঁচার পথ দেখিয়েছে এই বই। এর মধ্যে আলোচিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, উত্তরাধিকারের ন্যায্যতা, নারীর নিরাপত্তা, বৈবাহিক সম্পর্ক, নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, যৌনতা ও দাম্পত্য অধিকার, পর্দা ও স্বাধীনতা, স্রষ্টা কি পুরুষতান্ত্রিক ইত্যাদি !

বইটি কাদের জন্য?

  • সংশয়ী তরুণ-তরুণী: যেসব তরুণ-তরুণী পশ্চিমা বা ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণার কারণে ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন, তাদের জন্য বইটি একটি বোধোদয়ের মাধ্যম হতে পারে।
  • মুসলিম বাবা-মা: যারা সন্তানদেরকে পশ্চিমা মিডিয়া বা বন্ধু-বান্ধবের প্রভাব থেকে রক্ষা করে ইসলামের সঠিক শিক্ষা দিতে চান, তারা বইটির যৌক্তিক আলোচনার ধরণ কাজে লাগাতে পারবেন।
  • ইসলামিক দা’ঈ (প্রচারক): যারা আজকের আধুনিক সমাজে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নগুলোর প্রামাণিক ও কার্যকর জবাব খুঁজছেন, তারা এই বইটিকে একটি মূল্যবান আলোচনার প্রাথমিক গাইড হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
  • ইসলামী বিধানের প্রাথমিক জ্ঞান অন্বেষণকারী: যারা ইসলামে নারী সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধান (উত্তরাধিকার, পর্দা, মহর) সম্পর্কে সহজ ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা পেতে চান।

ভালো-মন্দ মন্তব্যঃ

  • বিষয়বস্তুর প্রাসঙ্গিকতা: বর্তমান সময়ে নারী স্বাধীনতা ও ধর্ম নিয়ে চলতে থাকা বিতর্কগুলোর একটি যথোপযুক্ত জবাব এই বই।
  • উপস্থাপনা শৈলী: জটিল ধর্মীয় ও সামাজিক বিষয়গুলোকে একটি আলোচনামূলক গল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা তরুণ ও সাধারণ পাঠকের কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমি মনে করি।
  • যুক্তি ও তথ্যনির্ভরতা: লেখকের আলোচনাগুলো শুধুমাত্র আবেগপ্রসূত নয়, বরং কুরআন, হাদিস, এবং তাফসিরগ্রন্থের রেফারেন্সের ভিত্তিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
  • প্রাথমিকতার ছাপ: গভীর গবেষণামূলক আলোচনার চেয়ে ভুল ধারণার নিরসনে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, ফলে সাহিত্যিক বা গভীর জ্ঞান অন্বেষণকারীদের কাছে এটি খুব একটা নতুন নাও লাগতে পারে।
  • গতিশীলতার অভাব: কিছু কিছু অধ্যায় (গল্প বা ভূমিকা বাদ রেখে) সরাসরি তর্কের মাধ্যমে শুরু হয়েছে, যা পড়ার গতি কমিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

সামগ্রিকভাবে বইটি আমার কাছে মোটামুটি ভালো লেগেছে। গল্প, যুক্তি আর বার্তা—সবকিছু মিলিয়ে আমি একে ৪.৩ রেটিং দিচ্ছি।

    বইয়ের নাম: নুসাইবা_এক সত্যান্বেষী নারী
    লেখিকা: আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ
    প্রকাশনী: রাইয়ান প্রকাশন
    মূল্য: ১৩০ ৳

    বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে আপনার নিকটস্থ লাইব্রেরিতে খোঁজ নিতে পারেন। এছাড়া, দেশের অন্যতম অনলাইন বুকশপ রকমারি, ওয়াফিলাইফ-সহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও বইটি পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ অফার সম্পর্কে জানতে বা সংগ্রহ করতে লিংকে ক্লিক করুন:  https://www.rokomari.com/book/453786/nusaiba

     

    আমার সম্পর্কে

    আমি ছফওয়ান আল মুসাইব, একজন 3D আর্টিস্ট, ভিডিও এডিটর। 3D আর্টের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই আমি আমার ক্যারিয়ার শুরু করি, এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের দক্ষতা গড়ে তুলেছি। পেশাগত জীবনে সাফল্যের পাশাপাশি আমি গল্প লেখা এবং ভ্রমণে দারুণ আগ্রহী। শখের বসে মাঝে মাঝে হাতে কলম তুলে নিই এবং আমার মনের ভাবনা ও অনুভূতিগুলোকে শব্দে রূপ দিই। আমার লেখা গল্পগুলো বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে, যা অনেক পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

    জনপ্রিয় পোস্ট

    সাম্প্রতিক পোস্ট