ছফওয়ান আল মুসাইব

স্যাপিওসেক্সুয়াল প্রেম

স্যাপিওসেক্সুয়ালদের প্রেম

প্রেমের গল্পগুলো সাধারণত শুরু হয় চোখের ভাষায়—চেহারার মোহনীয়তায় বা শারীরিক আকর্ষণ দিয়ে। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষও আছেন, যাদের ভালোবাসার সূত্রপাত ঘটে মন আর মস্তিষ্কের গভীরতায়। বাহ্যিক সৌন্দর্য তাদের জন্য গৌণ; তারা বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তার গভীরতায় মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়েন। বিজ্ঞানের ভাষায় এই বিশেষ অনুভূতিকে বলা হয় স্যাপিওসেক্সুয়াল

স্যাপিওসেক্সুয়ালদের প্রেম এবং আকর্ষণের অনুভূতি মূলত মস্তিষ্ককেন্দ্রিক। শারীরিক সৌন্দর্য বা সামাজিক অবস্থানের তুলনায় তাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্ব পায় অপর ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা। গভীর চিন্তাশক্তি, কৌতূহলী মনোভাব, এবং প্রচলিত নিয়ম-কানুনকে প্রশ্ন করার মানসিকতা তাদের গভীরভাবে আকৃষ্ট করে। তারা মনস্তাত্ত্বিক, দার্শনিক কিংবা রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্কের গভীরতা খুঁজে নেন এবং বিশ্বাস করেন যে, প্রকৃত আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু শরীর নয়, বরং মেধা।

স্যাপিওসেক্সুয়ালেরা কখনোই হুট করে প্রেমে পড়ে না। কারণ শারীরিক সৌন্দর্য তাদের কাছে মূল আকর্ষণ না হওয়ায়, তাদের প্রেমে পড়তে সময় লাগে। সাধারণত তাদের সম্পর্কের শুরু হয় বন্ধুত্ব দিয়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক ও বৌদ্ধিক সংযোগ হলে, তবেই আসে প্রেমের প্রশ্ন।

মেধা বা বুদ্ধিমত্তার প্রতি আকর্ষণ স্যাপিওসেক্সুয়ালদের ক্ষেত্রে প্রধান হলেও, শারীরিক আকর্ষণ যে একেবারে নেই তা নয়। তবে তাদের কাছে শারীরিক আকর্ষণ কেবলই সাময়িক বিষয়। দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের ক্ষেত্রে চেহারা বা বাহ্যিক সৌন্দর্য কখনোই মূল গুরুত্ব পায় না।

স্যাপিওসেক্সুয়ালদের জন্য কাউকে পছন্দ করা মানে সত্যিকারের পছন্দ। এর একটি বড় কারণ হলো, তারা সহজে কাউকে আকর্ষণীয় মনে করেন না এবং এতে সময় লাগে। ফলে, যখন তারা কাউকে ভালোবাসতে শুরু করেন, তখন সেটা হয় অত্যন্ত গভীর ও সিরিয়াস। তাদের কাছে একটি সফল সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি হলো মানসিক সংযোগ। স্যাপিওরা তাদের সঙ্গীর কাছ থেকে চায় গভীর কথোপকথন, বুদ্ধিদীপ্ত মতামত এবং চিন্তাশীল আলোচনা। সঙ্গীর সঙ্গে বৌদ্ধিক সংযোগ ছাড়া তাঁরা কোনো সম্পর্ককে স্থায়ী করতে আগ্রহী নন।

স্যাপিওসেক্সুয়ালরা তাদের সঙ্গীর সঙ্গে গভীর আলোচনা ও বিতর্কে আনন্দ খুঁজে পান। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আলাপ তাদের একদমই পছন্দ নয়। বরং তারা সঙ্গীর প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেন। তবে সাধারণত তারা একটু বাচাল স্বভাবের হন। যেকোনো বিষয়ে বিশদ আলোচনা, প্রশ্ন করা এবং নতুন জ্ঞান আহরণে তাদের আগ্রহ প্রবল। এবং তারা যথেষ্ট রসিক, তবে অযৌক্তিক বা অপ্রাসঙ্গিক রসিকতা তাদের বিরক্তির কারণ হয়।

যারা অতিরিক্ত চিৎকার করেন, মেজাজ দেখান অথবা বোকামী করেন, তাদের কাছে স্যাপিওসেক্সুয়ালদের কোনো মনোযোগ থাকে না। বরং বলা যে এ ধরনের মানুষ তাদের দু চোখের বিষ! তারা এমন মানুষকে পছন্দ করেন যারা নিজেদের অনুভূতিকে যুক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে পারেন, সহজে মেজাজ হারান না এবং জটিল পরিস্থিতিকেও শান্তভাবে সমাধান করার চেষ্টা করেন। স্যাপিওরা এই ধরনের মানুষকেই পছন্দ ও গভীরভাবে মূল্যায়ন করেন।

স্যাপিওসেক্সুয়ালরা ভালোবাসায় গভীর বিশ্বাসী। তাঁদের কাছে ভালোবাসা মানে কেবল আকর্ষণ নয়, বরং চিন্তা ও অনুভূতির এক সুন্দর সমন্বয়। তাঁদের ভালোবাসা স্রেফ আবেগের বশবর্তী হয়ে নয়, বরং একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানসিক যোগসূত্রের মাধ্যমে গড়ে ওঠে। আর এ কারণেই তাঁদের ভালোবাসা গভীর, স্থায়ী এবং অর্থবহ।

স্যাপিওসেক্সুয়ালদের জন্য সম্পর্ক মানে হলো এমন এক যাত্রা, যেখানে মেধা এবং মানসিক সংযোগই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা যাঁদের ভালোবাসেন, তাঁদের সঙ্গে একটি গভীর ও চিন্তাশীল সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান। আর এ কারণেই তাঁদের সম্পর্ক হয় অনন্য, গভীর এবং স্বতন্ত্র।

আমার সম্পর্কে

আমি ছফওয়ান আল মুসাইব, একজন 3D আর্টিস্ট, ভিডিও এডিটর। 3D আর্টের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই আমি আমার ক্যারিয়ার শুরু করি, এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের দক্ষতা গড়ে তুলেছি। পেশাগত জীবনে সাফল্যের পাশাপাশি আমি গল্প লেখা এবং ভ্রমণে দারুণ আগ্রহী। শখের বসে মাঝে মাঝে হাতে কলম তুলে নিই এবং আমার মনের ভাবনা ও অনুভূতিগুলোকে শব্দে রূপ দিই। আমার লেখা গল্পগুলো বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে, যা অনেক পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

জনপ্রিয় পোস্ট

সাম্প্রতিক পোস্ট